মঙ্গলবার, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৯:০৩ অপরাহ্ন
অফ্রিদির বাবা নাসির উদ্দিন সাথী বিভিন্ন সংস্থার শীর্ষ কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে দুর্নীতির মাধ্যমে বিপুল অর্থের মালিক হয়ে অপরাধ জগৎ নিয়ন্ত্রণ করতেন। আফ্রিদিকে জিজ্ঞাসাবাদে পতিত সরকারের সময় তাঁর বাবা ও তাঁর অনেক অপকর্মের তথ্য পাওয়া যাচ্ছে বলে জানান সিআইডির এক কর্মকর্তা। ক্ষমতার ছত্রচ্ছায়ায় একসময় নিজেকে অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ভাবতে শুরু করেন ‘ব্যাডবয়’ তৌহিদ আফ্রিদি।
কখনো রাত-বিরাতে মন্ত্রীদের সঙ্গে চলাফেরা, কখনো আবার মন্ত্রী-এমপিদের ছেলেমেয়ের সঙ্গে আড্ডা। মন চাইলে বিপুল অর্থের বিনিময়ে শোবিজের উঠতি নায়িকাদের সঙ্গে ফুর্তি করতেন। বিদেশে গিয়ে আন্ডারওয়ার্ল্ভ্রের শীর্ষ অপরাধীদের সঙ্গে দেখা করতেন। তবে গত বছর ৫ আগস্ট দেশের পটপরিবর্তনের পর এসব অপকর্মের ভয়ে গ্রেপ্তার আতঙ্কে দেশেই পালিয়ে ছিলেন তাঁরা। আর আফ্রিদি ও তাঁর বাবা বিদেশে পালানোর পরিকল্পনা করেছিলেন।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট সিআইডির এক কর্মকর্তা জানান, তাঁদের কাছে তথ্য রয়েছে, নাসির উদ্দিন সাথী মাই টিভির প্রকৃত মালিক নন। বিলকিস জাহান নামের এক নারীর কাছ থেকে জাল-জালিয়াতি ও পেশিশক্তি দেখিয়ে মাই টিভি দখল করে নেন। পতিত সরকারের কজন মন্ত্রী ও নেতার সহযোগিতায় নাসির উদ্দিন সাথী প্রভাবশালী হয়ে ওঠেন। বাবার সহযোগিতায় ছেলে আফ্রিদিও বেপরোয়া হয়ে ওঠেন।
সিআইডির ওই কর্মকর্তা জানান, জিজ্ঞাসাবাদে আফ্রিদি ও তাঁর বাবার অবৈধ সম্পদের বিষয়ে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে। সেসব যাচাই-বাছাই করে সত্যতা মিললে বাবা-ছেলের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিংয়ের মামলা করা হবে।
২০১৫ সালে ইউটিউবার ও কনটেন্ট ক্রিয়েটর হিসেবে যাত্রা শুরু তৌহিদ আফ্রিদির। অনেক নায়িকা ও মডেলের সঙ্গে ফেসবুকে ছবি পোস্ট করতেন অফ্রিদি। অনেক ছবিতে তাঁদের রোমান্টিক ভঙ্গিতে দেখা যেত। ঢাকা মহানগর পুলিশের সাবেক গোয়েন্দাপ্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদের সঙ্গে তাঁর ছবি ও ভিডিও ভাইরাল হয়।
সিআইডি বলছে, তৌহিদ আফ্রিদি রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানার একটি হত্যা মামলার আসামি। গত বছর ১ সেপ্টেম্বর যাত্রাবাড়ী থানায় মামলাটি করেন মো. জয়নাল আবেদীন নামের এক ব্যক্তি। মামলায় তৌহিদ আফ্রিদি ও তাঁর বাবা নাসির উদ্দিন সাথীসহ ২৫ জনকে আসামি করা হয়। মামলায় এজাহারনামীয় ১১ নম্বর আসামি তৌহিদ আফ্রিদি।
গত ১৭ আগস্ট রাজধানীর গুলশান থেকে তৌহিদ আফ্রিদির বাবা নাসির উদ্দিন সাথীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তাঁকে যাত্রাবাড়ী থানার আসাদুল হক বাবু হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। পরদিন ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত তাঁর পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। জুলাই আন্দোলনে সংঘটিত এক হত্যা মামলায় গ্রেপ্তারের পর মুখোশের আড়ালে তাঁদের অপরাধ জগতের রহস্য উন্মোচিত হতে শুরু করে। জানা যায়, তৌহিদ আফ্রিদি ছিলেন সংঘবদ্ধ অপরাধীচক্রের মধ্যমণি। সিআইডির ভাষ্য, পতিত সরকারের আমলে নারী সরবরাহ, চাকরি বাণিজ্য, মাদক কারবারসহ অসংখ্য অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত হন তৌহিদ আফ্রিদি। ভুক্তভোগীরা এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাঁর অপকর্মের ফিরিস্তি তুলে ধরছেন। সিআইডি বিষয়টি তদন্ত করছে।